top of page
  • Writer's pictureJayanti Riverview

চেনা অচেনা বক্সা জয়ন্তী (দ্বিতীয় অধ্যায়)

পামসে টপ অভিযান


|| প্রথম পর্ব ||


টানা ঘুমের পর পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল পাঁচটার মধ্যেই। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করে না। দুজনে একে অপরকে তাড়া দিচ্ছি। এদিকে গাইড চলে আসবে সাড়ে ছ’টায়। আমরা রেডি হয়ে নিলাম। কাকু সকাল সকাল রুটি সবজি বানিয়ে দিলেন। পেট ভরে খেয়ে নিলাম, কারণ আজ ড্রাইফুড নিচ্ছিনা। আমাদের গাইড খুঁজতে কাকুকে একটু বেগ পেতে হয়েছে। কাকু নিজে রাস্তা চেনেন। অনেকবার স্থানীয় মানুষ হিসেবে রোভার্স মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের সাথে পামসে গিয়েছেন। কিন্তু এখন তাঁর কোমরে ব্যাথা, তাই আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারলেন না। এখানকার খুব কম গাইড পামসে যাওয়ার রাস্তা চেনে। কারণ ওদিকে সাধারণত কেউ যায় না, কোনো রাস্তা সেভাবে নেই। আমরা আমাদের গাইড হিসেবে আজ যাকে পেলাম তিনি সেই ব্যক্তি যার সাথে গতকাল সিঞ্চুলায় দেখা হয়েছিল। উনি খুব গরীব। রোজ ওই পথে ভূটানে যান পায়ে হেঁটে, ফল সংগ্রহ করে এনে এখানে বেচে দেন। অর্থাৎ পেশাদার গাইড নন। আগে দুবার পামসে টপ গিয়েছেন, কিন্তু কতক্ষণ সময় লাগবে বা কিলোমিটারের আন্দাজ কোনোটাই ওনার নেই। সকাল সাতটা দশে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। ইন্দো-ভূটান বর্ডার অবধি একই রাস্তা। অর্থাৎ আজ আমাদের প্রথম তেরো কিমি মাধ্যমিকের প্রশ্নের মতো। পায়ের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বুঝলাম যখন রোভার্স পয়েন্টে উঠে এলাম। কাল যে রাস্তা এক ঘন্টা লেগেছিল, আজ তা চল্লিশ মিনিটে উঠলাম। বিরতি নিয়ে আবার এগিয়ে চলা। নটা বাইশ মিনিটে পৌঁছে গেলাম ইন্দো ভূটান বর্ডার। কাল বর্ডার পেরিয়ে ভূটানের জাতীয় সড়কে নেমেছিলাম, আজ বর্ডার ধরেই দক্ষিণ পূর্বে জঙ্গলে প্রবেশ করব। জঙ্গলের ঘনত্ব ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। মুভি তুলতে গেলে পা লতাপাতায় জড়িয়ে আটকে যাচ্ছি। আমার সামনে বিশ্বকে কতবার হোঁচট খেতে দেখলাম বলা মুশকিল। একদিকে খাদ, যদিও গাছের সবুজে তা আড়ালে চলে গেছে। একদিকে খাঁড়া পাহাড়, তার গায়ে সারি সারি গাছ আর তার থেকে লতানে গাছগুলো নেমে এসে আমাদের পথ অবরুদ্ধ করেছে। গাইড কাকু ওনার কুকরি দিয়ে যতটা সম্ভব গাছের ডাল সরিয়ে মানুষ যাওয়ার মতো ফাঁকা করে দিচ্ছেন। ওনার পর বিশ্ব, শেষে যাচ্ছি আমি। মাঝে মাঝে কাঁটা গাছের সম্মুখীন হতে হয়েছে যেগুলো ছাড়াতে ঘাম ছুটে গিয়েছিল। ঘন জঙ্গলের শেষে একটা বেড়া দেখলাম। ওটা টপকে এগোতে থাকলাম। সত্যিই মাঝে মাঝে রাস্তায় ভাগ আছে, গাইড না থাকলে সঠিকটা নির্বাচন করা সম্ভব হত না। জঙ্গলের ঘনত্ব কমল যখন বেশ কিছুটা উচ্চতা আমরা উঠে এলাম। একটা ভিউ পয়েন্টে পৌঁছে এখন দেখতে পাচ্ছি রোভার্স পয়েন্ট আমাদের পশ্চিম দিকের এক পাহাড়ের গায়ে। এনেকটা পথ এসেছি, কিন্তু দক্ষিণ দিকে পামসে টপের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তা এখনো অনেকটা সময় লাগবে। বিস্কুট আর কমলালেবু বিরতি চলছে। তাপমাত্রা আজ একটু বেশি কিন্তু মেঘলা আকাশ থাকায় গরম লাগছে না। একটু আগে ঘন জঙ্গলের মধ্যে রেইন ফরেস্টের মতো স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া ছিল। বর্ষায় এই অঞ্চলে জোঁকের উপদ্রব হয়, এখন সেই ভয়টা নেই। কিছুদূর এগোনোর পর দেখলাম এক জায়গায় লম্বা লম্বা পোড়া কাঠ পড়ে আছে। আমাদের গাইড অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন। আমরাও অবাক। এই দুর্ভেদ্য জঙ্গল পেরিয়ে এতটা উঠে এসে কারা মড়া পুড়িয়েছে? উত্তর খুঁজে পাইনি। এগিয়ে গিয়ে আরো একটা বেড়া টপকে গেলাম। পথ মোটামুটি বর্ডার ধরেই। তবে আরো কতটা বলা মুশকিল। জল খুব মেপে পান করছি, অনেকক্ষণ এখনো চালাতে হবে। পথ আর কতটা সেটা বোঝা যাচ্ছে না। আদৌ ঠিক যাচ্ছি কিনা সেটা সম্পর্কেও গাইড কাকু নিশ্চিত নন, এদিকে ঠিক সময়ে সামিট করে নেমেও আসতে হবে। প্রতিটা পদক্ষেপে গতবছর জাপফু শৃঙ্গ অভিযানের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাথার উপর গাইড ছাড়াও তিন দাদা ছিল, এখানে আমাকেই নিতে হবে।






|| দ্বিতীয় পর্ব ||


পাহাড়ে উচ্চতা পরিবর্তনের সাথে সাথে আবহাওয়ার যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি পরিবর্তিত হয় স্বাভাবিক উদ্ভিদ। আমরা প্রথমে পেলাম ঘন স্যাঁতসেঁতে জঙ্গল, তারপর জঙ্গলের ঘনত্ব কমল, ফার্ণের শোভা দেখতে পেলাম, দেখলাম শতাব্দী প্রাচীন কিছু ছায়াবৃক্ষ। এভাবে চলতে চলতে কখন যে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি বুঝতে পারিনি। একটা চড়াই উঠে হঠাৎ করে দেখি আর বড় গাছ নেই; শুধু ঝোপ বা গুল্মজাতীয় গাছ। একদিকে খাদ সোজা নেমে গেছে ভূটানের দিকে। আর সেদিকে তাকিয়ে মন ভরে গেল। পূর্বে যতদূর চোখ যায় ভূটানের পাহাড়শ্রেণি দৃশ্যমান। দক্ষিণ দিকে পাহাড় গিয়ে সমতলে মিশেছে। নদীগুলোর মধ্যগতি সুস্পষ্ট। দক্ষিণে রায়ডাক, জয়ন্তী; পশ্চিমে দূরে ডিমা ও কালজানি নদীর প্রবাহ দেখতে পাচ্ছি। সমগ্র ডুয়ার্স চোখের সামনে, রোভার্স পয়েন্ট, লেপচাখা, অসলুম দেখা যাচ্ছে বেশ নীচে। একটা অদ্ভুত আনন্দে মন ভরে গেল। ঘড়িতে তখন বাজে এগারোটা দশ। আমরা পামসে টপের ফ্ল্যাগ দেখে সেখানে এসে নতজানু হয়ে প্রকৃতি মা কে শ্রদ্ধা জানালাম। তারপর মিনিট পনেরো ফোটো তোলার সময় নিলাম। তবে মনটা খচখচ করছিল। গাইডকাকুকে বললাম ব্যাপারটা। আসলে আমরা যে পতাকাগুলোকে টপ বলে চিহ্নিত করলাম তার থেকেও উপরে যাওয়া যায়। কিন্তু উনি বললেন এটাই টপ, এর উপরে কিছু ঝোপঝাড় আছে তাই গিয়ে লাভ নেই। কিছুক্ষণ পর আমরা ফিরতে যাব, ওনাকে আর দেখতে পাই না। অনেকবার ডাকার পর তিনি সাড়া দিলেন এবং আমাদের উপরে ডাকলেন। আমরা উপরে গিয়ে দেখি মূল সামিটে এবার পৌঁছলাম। অর্থাৎ, ৫৮৮৮ ফুট উচ্চতায় আরোহণ করলাম। এখানটা একদম পাহাড়ের মাথা, চওড়া সমতলে এক জায়গায় পাথরের বেদী করা, তাতে কিছু ভূটানি টাকা রাখা আছে। উনি বললেন, সেই দুবছর আগে এসেছেন, তাই খেয়াল ছিল না যে উপরে যাওয়া যায়, আমরা বলতে উনি দেখতে গিয়েছিলেন। সুতরাং, সাড়ে এগারোটার সময় আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছলাম। এবার ফেরার পালা।






পামসে টপ সামিটে

 

Writer and Explorer: Soumik Maiti

He is a private tutor by Profession and his aim in life is to explore the world.

Original blog: Click here => Bong explorer


55 views0 comments
bottom of page