top of page
  • Writer's pictureJayanti Riverview

চেনা অচেনা বক্সা জয়ন্তী (তৃতীয় অধ্যায়)

Updated: Aug 6, 2020

চুনাভাটির ‘দুকপা’দের কথা


|| প্রথম পর্ব ||


পামসে টপ আরোহণ করে ফিরলাম দুপুর আড়াইটে। ফেরার সময় জঙ্গলের রাস্তা অবধি গাইড কাকু আমাদের আগে আগে চললেন। একটা পনেরো নাগাদ সিঞ্চুলা বর্ডারে এসে একবার বিরতি নিলাম আমরা। তখনই ঠিক করলাম এবারে আমাদের পরিচিত রাস্তায় পৌঁছে গিয়েছি, তাই আমরা দৌড়ে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব নেমে যাব তাশিগাঁও। গাইড কাকু যৌবন পেরিয়ে এখন প্রৌঢ়, তাই ওনাকে বললাম ধীরে সুস্থে আসতে। রোভার্স পয়েন্ট থেকে পামসে কে দূর থেকে শেষবার বিদায় জানিয়ে এলাম। এদিকে যারা ট্রেকে আসেন তাঁরা লেপচাখা যাওয়ার পথে একবার রোভার্স পয়েন্ট ঘুরে যান। আর আমরা দুদিনে যাতায়াতে চারবার রোভার্স পয়েন্ট এসেছি দিনের বিভিন্ন সময়ে। সকালের সূচনা থেকে সূর্যাস্তের সব রংই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছি।তাশিগাঁও ফিরে দেখি আমাদের তাঁবু ঘিরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ফুবাকাকুর উঠোনে নারী-পুরুষ-জোয়ান-বয়স্ক নির্বিশেষে জনাপঞ্চাশেক মানুষ বসে আছেন। জানতে পারলাম এরা কোলকাতা থেকে বড় গ্রুপে এসেছে। রোভার্স পয়েন্ট থেকে ফিরে বিশ্রাম করছে, লেপচাখা চলে যাবে একটু পর। দৌড়ে ঘেমেনেয়ে ক্লান্ত শরীরে ফিরে এসে এত লোক দেখে ঘাবড়ে গেলাম, অগত্যা বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ফ্রেস হয়ে ভাত খেতে বসলাম যখন দেখলাম ওরা বিদায় নিচ্ছে। পরবর্তীকালে অবশ্য জানতে পারি ওই দলে আমার এক পরিচিত ছিল। ভাত খেয়ে উঠছি, এমন সময়ে আমাদের গাইড কাকু ফিরে এলেন। আমরা এক ঘন্টা গড়িয়ে নিলাম। আমাদের পরের গন্তব্য আপাতত চুনাভাটি। এখান থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তা এবং উচ্চতার পার্থক্য বিশেষ নেই, তাই বিকেলে বেরোবো ঠিক করলাম। চারটের একটু আগে রেডি হয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে চল্লাম চুনাভাটি গ্রামের উদ্দেশে। পথের এত শাখাপ্রশাখা, সন্দেহ হলেই স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিচ্ছি পথ চিনতে। এই পথেই চুনাভাটি হয়ে লামা, আদমা ও রায়মাটাং যাওয়া যায়। প্রধানত সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে হালকা উতরাই আর চড়াই ভেঙে চওড়া রাস্তা ধরেএগিয়ে চলা। কোথাও স্থানীয় মানুষ জঙ্গলের কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে, কোথাও বাচ্চারা তিরধনুক নিয়ে খেলছে, বিকেলবেলার রং ধরেছে আকাশে, সব মিলিয়ে একটা অদ্ভূত সুন্দর শান্তি আমাদের সকালের ক্লান্তি মুছে দিল।




চুনাভাটি গ্রামের পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখা


|| দ্বিতীয় পর্ব ||


তাশিগাঁও থেকে চুনাভাটি আসতে সময় লাগল পৌনে এক ঘন্টা। পথ চলার মাঝে একটি বাঁকে বেশ বড় বোল্ডার পেলাম। ফ্রি হ্যান্ড রক ক্লাইম্বিং করে নেওয়া হল। তারপরহহালকা চড়াই উঠে চারদিক সবুজে ঘেরা একটা বিশ্রামের ছাউনি পেলাম। সামনেই রয়েছে একটা বড় ক্রস, সম্ভবত কোনো ক্রিশ্চিয়ান ব্যাক্তির সমাধিক্ষেত্র। এরপর পথ পাহাড়ের গা দিয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে। দুটো রক ফল জোন পেলাম। জায়গাগুলো শীতকালেও ভয়ংকর। অনেকটা উপর থেকে নীচ অবধি ধ্বসে নেড়া হয়ে গেছে। এই অংশটা পেরোনোর সময় দেখলাম পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ পূর্ব দিকটা উন্মুক্ত, আর সূর্যাস্তের আলোয় দেখা যাচ্ছে ডিমা ও কালজানি নদীসহ ডুয়ার্স। চুনাভাটি গ্রামটি খুবই শান্ত। গ্রামে প্রবেশ করার পূর্বে কিছুক্ষণ থেকে মন্ত্রোচ্চারণের শব্দ শুনছিলাম। আমরা পৌঁছাতে থেমে গেল। প্রথমে এলাম একটা বৌদ্ধ গুম্ফার সামনে। তারপর এগিয়ে গেলাম বাড়িগুলো দর্শন করতে। যেন মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই এক টুকরো ভূটান। দুজনেই ছোট্ট গ্রামের সৌন্দর্যে আত্মহারা হয়ে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ একা ঘোরাঘুরি করে গুম্ফায় এসে বিশ্বর জন্য অপেক্ষা করছি। সূর্য নির্ধারিত সময়ের আগেই ডুবে গেছে মেঘেদের রাজ্যে। ক্ষীণ আলোয় একাকী বসে অদ্ভুত সুন্দর এক নিস্তব্ধতা উপভোগ করছি, দেহের প্রতিটি লোমকূপ দিয়ে প্রকৃতি আর মানুষের এই নিবিড় সহাবস্থান অনুভব করছি। নীরবতা ভেঙে বিশ্বকে ডাকতেও ইচ্ছা করল না, জানি ও আশেপাশে কোথাও আছে, ওর মতো করে অনুভব করছে। অনেকক্ষণ পর একজন লোক একটা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আরেক জায়গায় ঢুকল। একটা ছোট মেয়ে আরেকটা বাচ্চাকে দু হাতের ভরে পিঠে করে নিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকল। কিছুক্ষণ পর আবার একই পথে ফিরে গেল। পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমেনি, কিন্তু চারপাশের স্নিগ্ধতা সময়কে যেন মন্থর করে দিয়েছে। ফুবা কাকুকে কথা দিয়ে এসেছি পাঁচটার সময় ফিরে যাব। এখনই বাজে চারটে পঞ্চাশ। মিনিট পাঁচেক পর বিশ্বর ডাক শুনলাম। সাড়া দিতে ও গুম্ফায় উঠে এসে বলল এখুনি আমার সাথে চলো, সামনেই একটা বড় মন্দির আছে, তার ভিতরে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটা গুম্ফা আছে, ওখানেই পূজো হচ্ছিল এতক্ষণ । আমি বললাম, সন্ধ্যা হয়ে আসছে, ফিরতে সমস্যা হবে। ও বলল, ওখানে গিয়ে ও ভাব জমিয়ে ফেলেছে গ্রামের মানুষের সাথে। তারা পূজোর প্রসাদ না খাইয়ে ছাড়বে না। ওরা আমায় তোমাকে ডেকে আনতে পাঠিয়েছে। অগত্যা এক প্রকার দৌড়ে সেখানে যেতেই হল। বৌদ্ধ মন্দিরের প্রবেশদ্বার অতিক্রম করে দেখি একদল নারী পুরুষ লাইন দিয়ে বসে গল্প করছে। একদিকে বয়স্কদের জমায়েত, আরেকদিকে বাচ্চারা ছোঁয়াছুয়ি খেলছে। প্রত্যেকের মুখের মধ্যে দারুন মিল। এরাই হল ভূটানের বহু প্রাচীন দুকপা সম্প্রদায়। এরা সম্পূর্ণভাবে স্বতন্ত্র ও নিজেদের ভাষায় কথা বলে। এদের মিশুকে নম্র অতিথিপরায়ণ স্বভাব সম্পর্কে বইতে পড়েছি। তবে এদের আতিথেয়তা গ্রহণের সুযোগ পাব এতো স্বপ্নাতীত।




চুনাভাটি গ্রামে


|| তৃতীয় পর্ব ||


আমরা দুজন গিয়ে বসলাম ওদের সাথে এক লাইনে। একজন বয়স্কা মহিলা আমাদের জিজ্ঞেস করলেন আমরা আর কজন এসেছি। ওরা আমাদের আপাতত দুদিনের ভ্রমণের কাহিনী শুনে চমকে গেছে। কালকের এক গাইডকে ওখানে দেখলাম। অনতিদূরে বসে সেও শুনছে আমাদের কথা। আমাদের বলল, তোমরা একটা গাইড নিয়ে গেলে ভালো করতে। ইতিমধ্যেই আমাদের পূজোর প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে, এক থালা বিস্কুট আর সাথে দুধ চা। বেশ অদ্ভুত লাগল চা টা। চিনি খুব কম আর চায়ের পরিমাণ এত কম যে রং ধরেনি। একজন যুবক আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য নানারকম গল্প বলতে শুরু করল যার একটিও সত্য নয়। ওর পাশে বসে থাকা বয়স্কা মহিলারা ইশারা করে বলল, ওর কথা শুনতে না, মজা করছে। এইভাবে মজার মধ্যে দিয়ে সময় কাটতে থাকল। আমরা উঠব উঠব করছি কিন্তু যুবকটি বলল, আমরা আমাদের অতিথিদের চা খাইয়ে ছেড়ে দিইনা। তোমরা আজ এখানে থেকে যাও। রাত বারোটা অবধি নাচগান হবে, আনন্দ কর, তারপর ঘুমিয়ে পড়বে এইখানেই, সব ব্যবস্থা করে দেব। আমরা বললাম, আমরা তাশিগাঁও ফিরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবু বারণ শুনতে নারাজ। বলল, দ্যাখো আমরা ব্যবসার খাতিরে থাকা খাওয়ার জন্য পয়সা নিই, কিন্তু আজ পূজোর দিন, তাই থাকা ফ্রি, খাওয়া অফুরন্ত। তোমরা এখন এক গ্লাস করে হাড়িয়া খেয়ে নাও। বিশ্ব মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে না পেরে এক গ্লাস নিয়ে ফেলল। আমি সুস্থ শরীরে দুজনে যাতে ফিরতে পারি তার জন্য এই অফার গ্রহণ করিনি। বিশ্ব বলল, দেখো আমাকে নেশা হয়ে গেলে। যদিও এক দুই চুমুক খাওয়ার পর বিস্বাদে ও আর ছোঁয়েনি। এরপর এল এক থালা ভাত, তাতে দুটো পকোড়া আর শুয়োরের মাংস। এটাও প্রসাদ। আহা! এমন প্রসাদ খেতে পেট লাগে না, একটা পেটুক মন লাগে। তিনটের সময় গলা অবধি ডিমভাত খেয়ে আবার সাড়ে পাঁচটায় পর্ক ভাত। বিশ্বর পর্ক ভালো লাগে না, আর খিদেও নেই। ও একটু চেঁখে রেখে দিল। আমরা ওই যুবকের মুখে প্রাপ্তবয়স্ক জোকস শুনতে শুনতে লজ্জাবোধ করছি। আর ওরা তখন নিজেদের মধ্যে ওদের ভাষায় হাসাহাসি করছে। আমাদের সাথে ওদের কথোপকথনের মাধ্যম হল হিন্দি। দুয়েকজন বাংলার কিছু শব্দ জানে, কিছুটা বোঝে, কিন্তু বলতে পারে না। হাত মুখ ধুয়ে এসে বিশ্বকে তাগাদা দিলাম। ও পাখির মতো খাবার থালা থেকে খুঁটে খুঁটে ভাত খাচ্ছিল। আমরা উঠছি দেখে আবারও অনুরোধ করল রাত অবধি থেকে ওদের মজায় সামিল হবার জন্য। এও বলল রাতে আমাদের তাশিগাঁও ছেড়ে দিয়ে আসবে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি আজ যা পরিশ্রম হয়েছে বিশ্রাম না নিলে কাল রুকস্যাক কাঁধে জয়ন্তী অবধি অতটা পথ যাওয়া সম্ভব হবে না। অগত্যা ওদের সাথে হাত মিলিয়ে, বড়োদের আশীর্বাদ নিয়ে দুকপা গোষ্ঠীর উষ্ণ আতিথেয়তা উপভোগ করে চুনাভাটি থেকে বিদায় নিলাম। পুরো অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় আমার হেড টর্চটা জ্বেলে নিলাম। বিশ্ব টর্চ আনেনি। ও আমার রিদিমে ঠিক পিছনে হাঁটছে। আমি তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভাতে ঠাসা দেহ নিয়ে কিভাবে যে এগোচ্ছিলাম এখনো ভাবতেই পারছি না। শুধু একটাই লক্ষ্য, তাশিগাঁও ঢুকতে হবে আজ। রাস্তা ফুরায়না। তবে সৌভাগ্য এই যে পথ চিনে ফিরতে ভুল হয় নি আর কোনো হিংস্র জন্তু জঙ্গলে ছিল না। এতটাই নিশ্চুপ চারপাশ যে নিজেদের পায়ের শব্দে নিজেরা ভাবছি কেউ আমাদের পিছনে যেন আসছে। জোনাকির আলো জ্বলছে নিবছে, আর গাছপালার ফাঁক দিয়ে হালকা চাঁদের আলো পড়েছে পথে। শেষ দুশো মিটার বেশ চড়াই। আমরা প্রায় যখন এসেই গেছি, ভর্তি পেটের জন্য অস্বস্তি হচ্ছে দেখে আলো নিভিয়ে চিত হয়ে রাস্তায় শুয়ে বিশ্রাম করে নিলাম। যখন এসে তাশিগাঁও ঢুকলাম তখন প্রায় পৌনে সাতটা। ফুবা কাকু জিজ্ঞেস করলেন কখন ডিনার করবে তোমরা? রান্না প্রায় হয়ে গেছে, আজ কাটলুম নদীর মাছ পাওয়া গেছে, তাই মাছভাত।

|| তৃতীয় পর্ব ||

আমরা দুজন গিয়ে বসলাম ওদের সাথে এক লাইনে। একজন বয়স্কা মহিলা আমাদের জিজ্ঞেস করলেন আমরা আর কজন এসেছি। ওরা আমাদের আপাতত দুদিনের ভ্রমণের কাহিনী শুনে চমকে গেছে। কালকের এক গাইডকে ওখানে দেখলাম। অনতিদূরে বসে সেও শুনছে আমাদের কথা। আমাদের বলল, তোমরা একটা গাইড নিয়ে গেলে ভালো করতে। ইতিমধ্যেই আমাদের পূজোর প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে, এক থালা বিস্কুট আর সাথে দুধ চা। বেশ অদ্ভুত লাগল চা টা। চিনি খুব কম আর চায়ের পরিমাণ এত কম যে রং ধরেনি। একজন যুবক আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য নানারকম গল্প বলতে শুরু করল যার একটিও সত্য নয়। ওর পাশে বসে থাকা বয়স্কা মহিলারা ইশারা করে বলল, ওর কথা শুনতে না, মজা করছে। এইভাবে মজার মধ্যে দিয়ে সময় কাটতে থাকল। আমরা উঠব উঠব করছি কিন্তু যুবকটি বলল, আমরা আমাদের অতিথিদের চা খাইয়ে ছেড়ে দিইনা। তোমরা আজ এখানে থেকে যাও। রাত বারোটা অবধি নাচগান হবে, আনন্দ কর, তারপর ঘুমিয়ে পড়বে এইখানেই, সব ব্যবস্থা করে দেব। আমরা বললাম, আমরা তাশিগাঁও ফিরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবু বারণ শুনতে নারাজ। বলল, দ্যাখো আমরা ব্যবসার খাতিরে থাকা খাওয়ার জন্য পয়সা নিই, কিন্তু আজ পূজোর দিন, তাই থাকা ফ্রি, খাওয়া অফুরন্ত। তোমরা এখন এক গ্লাস করে হাড়িয়া খেয়ে নাও। বিশ্ব মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে না পেরে এক গ্লাস নিয়ে ফেলল। আমি সুস্থ শরীরে দুজনে যাতে ফিরতে পারি তার জন্য এই অফার গ্রহণ করিনি। বিশ্ব বলল, দেখো আমাকে নেশা হয়ে গেলে। যদিও এক দুই চুমুক খাওয়ার পর বিস্বাদে ও আর ছোঁয়েনি। এরপর এল এক থালা ভাত, তাতে দুটো পকোড়া আর শুয়োরের মাংস। এটাও প্রসাদ। আহা! এমন প্রসাদ খেতে পেট লাগে না, একটা পেটুক মন লাগে। তিনটের সময় গলা অবধি ডিমভাত খেয়ে আবার সাড়ে পাঁচটায় পর্ক ভাত। বিশ্বর পর্ক ভালো লাগে না, আর খিদেও নেই। ও একটু চেঁখে রেখে দিল। আমরা ওই যুবকের মুখে প্রাপ্তবয়স্ক জোকস শুনতে শুনতে লজ্জাবোধ করছি। আর ওরা তখন নিজেদের মধ্যে ওদের ভাষায় হাসাহাসি করছে। আমাদের সাথে ওদের কথোপকথনের মাধ্যম হল হিন্দি। দুয়েকজন বাংলার কিছু শব্দ জানে, কিছুটা বোঝে, কিন্তু বলতে পারে না। হাত মুখ ধুয়ে এসে বিশ্বকে তাগাদা দিলাম। ও পাখির মতো খাবার থালা থেকে খুঁটে খুঁটে ভাত খাচ্ছিল। আমরা উঠছি দেখে আবারও অনুরোধ করল রাত অবধি থেকে ওদের মজায় সামিল হবার জন্য। এও বলল রাতে আমাদের তাশিগাঁও ছেড়ে দিয়ে আসবে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি আজ যা পরিশ্রম হয়েছে বিশ্রাম না নিলে কাল রুকস্যাক কাঁধে জয়ন্তী অবধি অতটা পথ যাওয়া সম্ভব হবে না। অগত্যা ওদের সাথে হাত মিলিয়ে, বড়োদের আশীর্বাদ নিয়ে দুকপা গোষ্ঠীর উষ্ণ আতিথেয়তা উপভোগ করে চুনাভাটি থেকে বিদায় নিলাম। পুরো অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় আমার হেড টর্চটা জ্বেলে নিলাম। বিশ্ব টর্চ আনেনি। ও আমার রিদিমে ঠিক পিছনে হাঁটছে। আমি তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভাতে ঠাসা দেহ নিয়ে কিভাবে যে এগোচ্ছিলাম এখনো ভাবতেই পারছি না। শুধু একটাই লক্ষ্য, তাশিগাঁও ঢুকতে হবে আজ। রাস্তা ফুরায়না। তবে সৌভাগ্য এই যে পথ চিনে ফিরতে ভুল হয় নি আর কোনো হিংস্র জন্তু জঙ্গলে ছিল না। এতটাই নিশ্চুপ চারপাশ যে নিজেদের পায়ের শব্দে নিজেরা ভাবছি কেউ আমাদের পিছনে যেন আসছে। জোনাকির আলো জ্বলছে নিবছে, আর গাছপালার ফাঁক দিয়ে হালকা চাঁদের আলো পড়েছে পথে। শেষ দুশো মিটার বেশ চড়াই। আমরা প্রায় যখন এসেই গেছি, ভর্তি পেটের জন্য অস্বস্তি হচ্ছে দেখে আলো নিভিয়ে চিত হয়ে রাস্তায় শুয়ে বিশ্রাম করে নিলাম। যখন এসে তাশিগাঁও ঢুকলাম তখন প্রায় পৌনে সাতটা। ফুবা কাকু জিজ্ঞেস করলেন কখন ডিনার করবে তোমরা? রান্না প্রায় হয়ে গেছে, আজ কাটলুম নদীর মাছ পাওয়া গেছে, তাই মাছভাত।


দুকপা সম্প্রদায়ের সঙ্গে

পূজোর প্রসাদ

 

Writer and Explorer: Soumik Maiti

He is a private tutor by Profession and his aim in life is to explore the world.

Original blog: Click here => Bong explorer

48 views0 comments
bottom of page